নাশকতার মা’ম’লা’য় সাংবা’দিক গ্রে’প্তা’র, বা’দী চিনেন না আ’সা’মিকে

নাশকতা মামলায় চট্টগ্রামে আবেদুজ্জামান আমিরীর নামে এক গণমাধ্যমকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। তবে এ মামলার বাদী হালিশহরের মুন্সী পাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাজ্জাদ আহমেদ সাদ্দাম (৩৬) জানিয়েছেন তিনি আসামিকে চিনেন না।

বুধবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) একটি টিম চট্টগ্রামের পটিয়া থানার মোড় এলাকা থেকে সাংবাদিক আবেদ আমিরীকে তুলে নিয়ে যায়। পরে রাত ১০টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে যৌথবাহিনী আবিদ আমেরীকে গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে পাঠানো হলে তিনি জামিন আবেদন করেন। পরে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গ্রেপ্তার আবিদ আমেরী পটিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দারখীল এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীন আমিরীর ছেলে। তিনি দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় পটিয়া-কর্ণফুলী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি কর্ণফুলী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর দুপুর ২টার দিকে বাদীর বাসায় হামলা হয়। ওইদিন লাঠিসোঁটা নিয়ে বাদীর ছোট বোন নুসরাত আহমদ ও নাজমুন নাহারকে মারধর করে ১ ও ২ নম্বর আসামি। এতে তারা গুরুতর আহত হন। মামলার ৩ থেকে ৫ নম্বর আসামি বাদীর দোকানঘর ভাঙচুর করে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেন।

এ ঘটনায় বাদীর চাচাতো ভাই খবর পেয়ে দোকানে গেলে ৬ থেকে ১০ নম্বর আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে তাকে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মারধর করে। এরপর আসামিরা বাদীর বোনের স্বামীর দোকানের মালামাল পুড়িয়ে দেয়, যার আনুমানিক মূল্য ৫ লাখ টাকা।

এরপর বাদী ও এলাকাবাসী আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে ১, ২ ও ৩ নম্বর আসামি অন্যদের সঙ্গে নিয়ে বাদীর পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়। একই বছরের ২২ নভেম্বর বাদী তার বন্ধুদের নিয়ে হুমকির বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে ১১ থেকে ৩১ নম্বর আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে তাকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বলে, না হলে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেন।

২০২৪ সালের ২৫ জুলাই বাদীর বোনের স্বামী দোকান থেকে সিএনজিযোগে বাসায় ফেরার পথে ১, ২ ও ৩ নম্বর আসামি দলবদ্ধ হয়ে সিএনজি থামিয়ে তার কাছ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও মালামাল ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। চিৎকার শুনে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে আসামিরা পালিয়ে যায়।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট কোতোয়ালি থানাধীন সিআরবি তিন রাস্তার মোড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় বাদী ও তার ফুফাতো ভাই সড়কে বের হলে ১ ও ২ নম্বর আসামি দলবদ্ধ হয়ে তাদের তাড়া করে। এক পর্যায়ে ১ নম্বর আসামির নির্দেশে ২, ৩ ও ৪ নম্বর আসামি বাদীর দিকে গুলি চালালে তার ফুফাতো ভাই রহিম গুলিবিদ্ধ হন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

মামলায় দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩২৪, ৩৮৫, ৩০৭, ৪২৭, ৪৫৯, ৩৫৮, ৪৪১, ৫০৬(২)/৩৪ ধারায় অপরাধের উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া দ্রুত বিচার আইন, ২০০২-এর ৪ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

বাদী মামলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আব্দুস সবুর লিটন, মো. ফারুক সিদ্দিক জুবায়ের, মোহাম্মদ সাইফুর রহমান পলাশ, মোহাম্মদ রফিক (কানা রফিক), মোহাম্মদ ইমরান, ইমন, মোহাম্মদ আসিফ মাহমুদ সুমন, দেলোয়ার, মারুফ, রাশেদসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৩১ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করেন। যার মধ্যে আবিদ আমেরীর নাম ২৯ নম্বরে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০০-২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ঘটনার সত্যতা ও গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আবিদ আমেরী কতটা এ ঘটনায় জড়িত তার সত্যতা ও তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি। যার হালিশহর থানার মামলাটি (মামলা নম্বর ০২/১৩৭) তদন্ত করছেন এসআই সোহেল রানা।

এদিকে আবেদ আমিরীর সহকর্মী সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন, মামলার কথিত অভিযোগে পটিয়ার সাংবাদিক আবেদ আমিরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট তিনি চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে ভাঙচুর করেছেন। অথচ তিনি ওইদিন হালিশহরেই যাননি, সারাদিন ছিলেন পটিয়াতেই।

তারা বলেন, সাংবাদিক আমিরীকে হালিশহর থানার দায়ের করা মামলাটির বাদি চিনেনও না। বাদি নিজেও বলেছেন, ৪ আগস্টের ভাঙচুরের ঘটনায় আমিরী জড়িত নন।

এরপরও আমিরী কিভাবে ওই মামলায় আসামি হলেন—এ নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। তবে তার স্বজনরা বলছেন, পটিয়ারই কেউ ষড়যন্ত্র করে আমিরীর নামটি হালিশহরের মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন।

মামলার বাদী হালিশহরের মুন্সীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাজ্জাদ আহমেদ সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিক আবেদুজ্জামান আমিরীকে চিনেন না বলে জানান।

এদিকে সাংবাদিক আবেদুজ্জামান আমিরীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে কর্ণফুলী প্রেসক্লাব ও কর্মরত সাংবাদিকগণ, আনোয়ারা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা অনতিবিলম্বে সাংবাদিক আবেদুজ্জামান আমিরীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email