প্রশাসনের একটি রো’গ আছে- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রশাসনের রোগ আছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আমাদের প্রশাসনের একটি রোগ জারি হয়ে আছে। তা হলো ক্ষমতায় কে আসতে পারে সেই সম্ভাব্যতা থেকে সে দলের নেতাকর্মীদের আগাম তেল দেওয়া। এখানে ঊর্ধ্বতন বা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা থাকে না। শনিবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং কালে তিনি এই মন্তব্য করেন।

দলীয় পরিচয়ে পর্যটন এলাকায় দখল-বেদখল, মারামারি ও ছিনতাই বাড়ছে, সাংবাদিকে এমন প্রশ্নে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা কোনো দলের বদান্যতায় কাজ করছি না। দেশের কল্যাণে যা যা করণীয় তাই করা হচ্ছে। প্রশাসনের কাউকে কোনো দপ্তর থেকে বলে দেওয়া হয়নি, অমুখ দলের লোকজনকে সহানুভূতি দেখাতে। কোনো দলের নেতাকর্মীরা দখল বা অন্য কোনো অপরাধে জড়ালে প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলীয় বিবেচনায় নয়, অপরাধ বিবেচনায় ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। উপদেষ্টা আরও বলেন, কক্সবাজারে অপহরণ ও মাদকের বিস্তার বেড়েছে। প্রায়শ গণমাধ্যমে বিষয়টি আসছে। আপনারা (সাংবাদিকরা) ও স্থানীয় সচেতনমহল জানেন কারা এসব করছে। উল্লেখ্য যে, এই বৈঠক থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ফোনে চকরিয়া থানার ওসিকে তৎক্ষনাত প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন ।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কাগজে কলমে ১২ লাখ বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। এরা আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। এদের প্রত্যাবাসন ছাড়া সীমান্ত এলাকার অপরাধ কর্মকাণ্ড থামানো মুশকিল। আবার তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনও সম্ভব নয়। বলতে গেলে রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা শাঁখের করাতে রয়েছি।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য রয়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখলে নেওয়ার পর থেকে বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে। আরাকান আর্মি অনেক জাহাজ আটকে রেখেছিল। ধরে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশি অনেক জেলেকে। এ কারণে দেশের সীমান্ত সুরক্ষা ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের স্বার্থে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর নবগঠিত উখিয়া ব্যাটালিয়নের (৬৪ বিজিবি) আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। নিজস্ব পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শনিবার এই যাত্রা শুরু হয়। এদিন পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে ঢাকার স্টেশন সদর দপ্তর, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং গাজীপুরের ডগ স্কোয়াড-৯ ইউনিট এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের।

সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) প্রশিক্ষণ মাঠে এসবের শুভ উদ্বোধন করেন। এসময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

পতাকা উত্তোলনের পর নবসৃজিত উখিয়া ব্যাটালিয়ন, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং বিজিবি ডগ স্কোয়াড -৯ ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত একটি সুসজ্জিত ও চৌকস দল মনোজ্ঞ প্যারেড প্রদর্শন করে। পরে সদ্য উদ্বোধনকৃত বিজিবি স্থাপনাসমূহের উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, বিগত কয়েক বছরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে স্পর্শকাতরতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে একটি ব্যাটালিয়ন স্থাপন সময়ের দাবি ছিল। এ প্রেক্ষাপটে সীমান্তে নজরদারি ও তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কক্সবাজারের উখিয়ায় একটি বিজিবি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হলো। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, অবৈধ অনুপ্রবেশ, ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য অবৈধ পণ্যের চোরাচালান প্রতিরোধ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ যেকোনো আত্মাসীমান্ত অপরাধ দমন এবং সীমান্তবর্তী জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে উখিয়া ব্যাটালিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে রামু সেনানিবাস ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কক্সবাজার ঘাঁটির এয়ার ভাইস মার্শাল এ এফ এম শামীমুল ইসলাম, রিজিয়ন কমান্ডার, বিজিবি সদর দপ্তর ও কক্সবাজার রিজিয়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email