কিশোরগঞ্জে প্রিয় নেতাকে দেখতে রাস্তায় নারী-পুরুষের ঢ’ল

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখনো নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণার আগেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম সিআইপি তার জন্মভূমি ও নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরে বিরামহীনভাবে ব্যাপক গণসংযোগ করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করে তাদের খোঁজ খবর নেন। এছাড়া মরহুম দলীয় নেতা কর্মীদের কবর জিয়ারত ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন।

শনিবার ৩০ নভেম্বর সকালে প্রথমে তিনি উপজেলার আব্দুল্লাহপুর জগতচর মাদ্রাসার বার্ষিক ইসলামী মহা-সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় অংশগ্রহণ শেষে মাদ্রাসার নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। পরে বিকেলে উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের বড়ছয়সূতী চকবাজার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় ও ধূপাখালী গ্রামের হযরত সানাউল উলুম মাদ্রাসা পরিদর্শন শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর বিএনপি-জামাতের ডাকা অবরোধ চলাকালীন সময় পুলিশের গুলিতে নিহত রেফায়েত উল্লাহ’র রেখে যাওয়া একমাত্র শিশু মেয়েসহ তার পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজ খবর নেন। এরপর তিনি ফরিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রবীণ বিএনপি নেতা মরহুম শামসুল হক ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মরহুম ইউনুস আলীর কবর জিয়ারতসহ তার মা’র সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং ফরিদপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মরহুম বোরহান মেম্বারের কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া তিনি ফরিদপুর ইউনিয়নের খিদিরপুুর গ্রামের ইউনুস আলীর বাড়িতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সেখান থেকে তিনি আমোদপুুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গ্রামবাসীর সাথে এক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। মতবিনিময় সভা শেষে আলালপুর গ্রামে দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করেন। রাতে ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদে নব-দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মোবারক হোসেন ও পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় করেন। এরপর তিনি ফরিদপুর আনন্দবাজারে এক ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রাখেন। সেখান থেকে রাত ৯ টার দিকে সালুয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সালুয়া কাল্লারপাড় এলাকায় প্রয়াত দলীয় নেতাকর্মীদের স্বরণে আয়োজিত এক শোকসভায় অংশগ্রহণ করেন। রাত ১০ টার দিকে কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এক ইসলামি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

দীর্ঘদিন পর নিজ নির্বাচনি এলাকায় আগমন উপলক্ষে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাদের প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায় অনেককে। মহিলারাও এসুযোগ হাতছাড়া করেননি, তারাও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের এলাকার সন্তান শরীফুল আলমকে দু’নয়ন ভরে দেখেন। তাদের প্রিয় নেতা শরীফুল আলমও গাড়ী থেকে নেমে নারী পুরুষের সাথে কুশল বিনিময় করে তাদের খোঁজ খবর নেন।

দিন ব্যাপী গণসংযোগ কালে তার সাথে ছিলেন, কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরুল মিল্লাত, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সহ-সভাপতি এডভোকেট মশিউর রহমান, কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. শাহাদাৎ হোসেন শাহ্ আলম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাহ উদ্দিন খান শাহজাহান, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জজকোর্টের এপিপি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ্ আলম, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফারুকুল ইসলাম ফারুক, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ, ফরিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, ছয়সূতী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সালাহ উদ্দিন মুর্শেদ নিজামী বাবুল, সাধারণ সম্পাদক মো. মোছলেহ উদ্দিন রতন, গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. মহসিন রানা বাদল, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মো. মাসুদ আহমেদ, রামদী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. মজনু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. সাফি উদ্দিন, সালুয়া ইউনিয়ন বিএনপি সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ফারুক মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. আজহার উদ্দিন লিটন, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানা, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম আলী, পৌর যুবদলের সদস্য সচিব মো. মোখলেসুর রহমান মঞ্জু, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যগ্ম আহবায়ক সামজাদ হোসেন শামীম, পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মো. কামরুল ইসলাম মুছা, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আওয়াল তালুকদার, জুয়েল রানা, মো. রফিকুল ইসলাম, রমিজ উদ্দিন খোকন, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মো. দেলোয়ার হোসেন, আলী আশরাফ সুমন, কাউসার আহমেদ জিন্নু মোল্লাহ, মিশকাত তালুকদার, যুবদল নেতা নূরুল ইশরাক, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুস সালাম সুমন, সদস্য সচিব শামীম রেজা, উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি এনায়েত উল্লাহ খাঁন, উপজেলা শ্রমিক দলের সদস্য সচিব তৌহিদুল ইসলাম (বিপ্লব), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পল্লী চিকিৎসক এ্যাসোসিয়েশন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক পল্লী চিকিৎসক মো.মেজবাউল হক খোকা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পল্লী চিকিৎসক এ্যাসোসিয়েশন কুলিয়ারচর উপজেলা শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান (রুবেল), সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম মিয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম সহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীবৃন্দ।

গণসংযোগকালে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম সিআইপি বলেন, আপনারা সজাগ থাকবেন। একটি বিষয়ে একটু বলে দেই, ধর্মীয়ভাবে বর্তমানে ৫ই আগষ্টের পর নানাবিধ ভাবে ছোট খাটো নানা ধরনের বিভিন্ন রকম অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার জন্য একটি মহল তৎপর আছে। আপনাদেরকে একটু এলার্ড করে দিয়ে সজাগ থাকার জন্য বলবো। সকল কিছুর পরে ইদানিংকালে একটা বিষয় আপনারা দেখবেন ইসকন। এটাকে নিয়ে নানা ধরনের একটা ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে চলছে। বহির বিশ্ব বা একটা রাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন ভাবে উসকানিমূলক অনেক কথা বলছে। আমরা মুসলমান, ধর্মীয়ভাবে আমাদের দীক্ষা হলো, আমরা অত্যান্ত ধৈর্য ও সহনশীলতার সহিত আমরা সকল পর্যায়ে এই শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সবসময় ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দেয়। যত উসকানিই আসুক, যত কথাই আসুক আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরবো। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে আপনাদের কোন সংগঠনের যদি কেউ জড়িত থাকেন, ধর্মীয় ভাবে ইসলামিক ভাবে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমরা বিচ্ছিন্ন ভাবে কোন কর্মসূচি, কোন কিছু পালন না করি। আমরা যেন সমন্বয় করে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি পালন করি। অতি উৎসাহী হয়ে কোন ভাবেই, চেষ্টা করা হচ্ছে যে আমাকে আঘাত কর, আমাকে একটা কিছু কর। এটার বিনিময়ে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সারা বাংলাদেশে হোক আমরা সেই সুযোগ দেবোনা। চট্টগ্রামে আপনারা দেখেছে, আমাদের এক ভাই এডভোকেট সাইফুল ইসলাম। কি ভাবে তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। শুধু এটা আল্লাহ আছেন, দেখতেছেন। ধৈর্য ধরুন, এ দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য অনেক ধরনের কথা, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আলেম উলামাদের কাছে আমার অনুরোধ, একটা পরামর্শ, একটা মাসোহারা ছাড়া হুট করে কোন পরিস্থিতিতে যেন আমরা পদক্ষেপে আগাইয়া না যাই। রাস্ট্র পরিস্থিতিতে আজকে সামাজিক ভাবেও আমরা একসাথে আছি এবং এপসেসিভ পতিত সৈরাচার ছাড়াও, এছাড়াও একটি রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমরা দেশে আছি। সকলে সম্বলিত ভাবে আমরা যেন যে কোন পদক্ষেপে আগাই। প্রশাসনসহ আমরা যেন এ ব্যাপারে একটু সজাগ থাকি। প্রিয় এলাকাবাসী আপনারাও সজাগ থাকবেন। দেশকে শেষ করে দিয়েছে। তার পরেও এখন পর্যন্ত দেশকে আবারো একটা রসাতলে নেওয়ার জন্য অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ ও সজাগ ভাবে আমরা চাই ভোটের অধিকার। সেই অধিকারটুকো ফিরে আসুক। জনগণের হাতে যেন আমরা মালিকানা ফিরিয়ে দেই। জনগণের দ্বারা যাকে খুশি তাকে এ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেউক। এটাই আমাদের মূল দায়িত্ব। আমরা সেই দায়িত্ব পরিপূর্ণ ভাবে পালন করেতে পারি নাই। এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এই জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পতিত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ভৈরব-কুলিয়ারচরে ৫ জন শহিদ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, গত ১৭ বছর আমরা ভোট দিতে পারি নাই। ভোটের অধিকারের কথা, গণতন্ত্রের কথা বললেই গুম, খুন, জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আমরা ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email