বাঘাইছড়িতে ৫ মাস ধরে বন্ধ মুসলিম ব্লক কমিউনিটি ক্লিনিক

‎রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার  মারিশ্যা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত মুসলিম ব্লক কমিউনিটি ক্লিনিকটি পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এই ক্লিনিকের কারণে এলাকার হাজারো মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

‎এলাকাবাসী জানান, গত এক বছর ধরে এই ক্লিনিকটি ছিল সাধারণ মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল। কাছাকাছি আর কোনো সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় মানুষ এখানে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা,সেবা গ্রহণ করতেন।
‎কিন্তু হঠাৎ করে ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তাদের কয়েক কিলোমিটার দূরে বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ দুই দিকেই বাড়তি চাপ পড়ছে ভুক্তভোগীরা । ক্লিনিক বন্ধ থাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গর্ভবতী নারী ও শিশুরা। নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা, টিকাদান কার্যক্রম ও প্রাথমিক সেবার জন্য তারা ক্লিনিকের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এখন বিকল্প না থাকায় অনেকেই সময়মতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না, ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে দিন দিন।
‎স্থানীয় ব্যাক্তি মোঃ জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, দীর্ঘ ১বছর ধরে এই ক্লিনিকটি সেবা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ক্লিনিকের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে আশেপাশের গ্রামের মানুষকে সামান্য অসুস্থতার চিকিৎসার জন্যও দূরে যেতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ক্লিনিক বন্ধ থাকার কারণে বিশেষ করে গর্ভবতী মা, শিশু এবং বৃদ্ধরা বেশি সমস্যায় পড়েছেন।  এই ক্লিনিক চালু থাকলে আমরা স্বল্প খরচে চিকিৎসা পেতাম। এখন বাধ্য হয়ে দূরের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।”
‎স্থানীয় বাসিন্দা মোকশেদা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের মতো সাধারণ মানুষ প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে পারি না। বিশেষ করে জরুরি পরিস্থিতিতে এই ক্লিনিক না থাকায় বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।”
‎স্থানীয় সূত্রে জানাযায় , ২০১৬ সালে স্হাপিত হয় এই ক্লিনিক টি এবং গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শুভ উদ্বোধন করা হয়। এক বছর ঠিকঠাকমতো কার্যক্রম চললেও হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে পড়ে এই ক্লিনিকটি ।
‎মুসলিম ব্লক কমিউনিটি ক্লিনিকের (CHCP) শাহনাজ আক্তারে সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন গত ৩০ জুনে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
‎মারিশ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান  আপন চাকমা বলেন, মুসলিম ব্লক কমিউনিটি ক্লিনিক দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে এলাকার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ ব্যাহত হওয়া শুধু হতাশাজনকই নয়, বরং জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে।স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমি  বহুবার স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুপস্থিতি ও সেবা বন্ধ থাকার বিষয়টি নজরে এনেছেন। তিনি সরকারের কাছে দ্রুত স্বাস্থ্যকর্মীদের স্থায়ী নিয়োগ ও পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং ক্লিনিক ভবনের সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।
‎এ বিষয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলাম যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন  ক্লিনিকের সেবাদানকারী শাহনাজ আক্তার অন্যত্র চাকরিতে যোগ দেওয়ায় বর্তমানে ক্লিনিকটি বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নতুন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (CHCP) নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত ক্লিনিকটি বন্ধ রাখতে হবে। যেহেতু কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে স্থানীয় স্থায়ী ঠিকানার ভিত্তিতে (CHCP) নিয়োগ দেওয়া হয়, তাই অন্য কোনো ক্লিনিক থেকে কর্মী বদলির সুযোগ নেই এবং ক্লিনিকে অতি শীঘ্রই একজন সেবাদানকারী নিয়োগ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email