কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ছৈয়দ নূর (৩৫) নামের এক যুবককে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের পর হত্যা করে পাহাড়ে ফেলে দেয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনার ৪ দিন পর নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন পাহাড় থেকে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মুখে স্কচটেপ, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মরদেহটি পাওয়া যায়। এ ঘটনায় এক রোহিঙ্গাসহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (২১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের আজুখাইয়া ফকিরপাড়া সংলগ্ন গহীন পাহাড় থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাশরুরুল হকের নেতৃত্বে ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. জাফর ইকবাল ও থানা পুলিশের একটি দল যৌথভাবে এই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে।
জানা যায়, নিহত ছৈয়দ নুর (৩৫) কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের দরগাহবিল বাগানপাড়ার আলী আহমদের ছেলে। সীমান্ত এলাকায় টুকিটাকি ব্যবসা করেই জীবন চালাতেন তিনি।
ঘটনার নেপথ্যে ছিল পূর্বের আর্থিক লেনদেন।
এ ঘটনার বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, প্রধান অভিযুক্ত ইসমাইল নামের এক যুবক ‘সিগারেট দেবে’ ও ‘হাওলাতি টাকা পরিশোধ করবে’ বলে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) জুমার নামাজের পর ছৈয়দ নুরকে মোবাইলে ডেকে নেন। ছৈয়দ নুর নিজ মোটরসাইকেলে আমতলী ছড়ায় গেলে সেখান থেকে বাইশফাঁড়ী যাওয়ার কথা বলে গভীর পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে, হাত-পা বেঁধে হত্যা করা হয়।
নিহতের খালাতো ভাই আবদুস সালাম বলেন, “ঈসমাইল মোবাইলে ডেকে নেয় ছৈয়দ নুরকে। তারপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও পাইনি। পরে পুলিশের সহযোগিতায় সন্ধেহভাজনদের ধরলে সব প্রকাশ হয়।”
নিহতের স্ত্রী জোবাইদা বেগম (২২) নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ১৯ জুলাই একটি অপহরণ মামলা করেন। ছৈয়দ নুরের দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে—ফারজানা ইয়াসমিন মুন্নি (৫) ও জান্নাতুল ফেরদৌস উর্মি (২.৫)।
এদিকে উক্ত ঘটনার বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাশরুরুল হক বলেন, “আটককৃত দুই আসামি হলেন—ঘুমধুমের আজুখাইয়া গ্রামের অছিউর রহমানের ছেলে মো. ইসমাইল (৩০) এবং কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১ এর সি-ব্লকের রহমত উল্লাহ (৩০)। রহমত উল্লাহ ক্যাম্পের ব্লক মাঝি আয়াসের আওতাধীন।”
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের দেয়া তথ্যমতে পাহাড় থেকে ছৈয়দ নুরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় আরও জড়িতদের শনাক্তে এবং নিহতের মোটরসাইকেল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।