ঠাকুরগাঁওয়ে ই’উটি’উব দেখে বাঁ’শের মা’চা’য় আ’ঙ্গু’র চা’ষে সফল জুয়েল ও শিপন 

বাড়ির আঙ্গিনায় বাঁশের মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ ফল। এ নিয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের মন্ডলাদান গ্রামের যুবক জুয়েল রানা ও শিপন।

প্রথমবার আঙুর চাষ করে চমক দেখিয়েছেন। বিদেশি এই ফল দেশের মাটিতেও যে মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়, তা করে দেখালেন তিনি। শিপন জুয়েল ইউটিউব দেখে আঙুর চাষের ধারণা নেন। এরপর বগুড়া জেলা এক কৃষকের কাছ থেকে বিদেশি কয়েকটি জাতের চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন।

প্রায় ১০ মাস আগে পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির উঠোনে বাঁশের মাচায় ৫ টি আঙ্গুরের গাছ লাগান। এর মধ্যে ৪টিতে ফলন এসেছে। প্রতিটির থোকায় ৩০০-৪০০ গ্রাম ফল এসেছে। প্রথমবারেই ফলন ভালো হওয়ায় আশপাশের কৃষকরা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।গাছে আঙুর ধরেছে এবং ৩০ থেকে ৬০ কেজি ফল পাওয়ার আশা করছেন। গাছে প্রচুর ফল হয়েছে। এক গাছে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। আঙুর গাছ ৮ ফুট দূরত্বে লাগানো হয়েছে।

এ গাছ লাগানোর আগে জমি প্রস্তুত করে প্রতিটি গর্তে ৫ কেজি বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করেছেন। ৩ ফুট গর্ত করে ইটের গুঁড়া, মোটা বালু ও জৈব সার মাটির সঙ্গে মিশ্রণ করে দিয়েছেন। প্রতিটি গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করেছেন, যাতে পানি না জমে। আঙুর গাছ যাতে দ্রুত লম্বা হতে পারে, তাই বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করেছেন। ফলে ঝড়-বৃষ্টি এলে গাছ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কম থাকে। চারা রোপণের ১১ মাসের মধ্যে গাছে ফল আসা শুরু করে। কৃষক জুয়েল আঙুর চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদনও করছেন। তার আঙুর বাম্পার ফলন দেখে আশপাশের কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় বিভিন্ন নার্সারি ও ব্যক্তি তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করতে আসছেন। তিনি প্রতিটি আঙুর গাছের কলম চারা মাত্র ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন।এবার বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষে নামতে চান তিনি

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠোনে বাঁশের মাচায় উপর থোকায় থোকায় ঝুলে আছে আঙ্গুর। বাঁশের মাচা তৈরি করেছেন বাড়ির মালিক। আঙ্গুরের ভাড়ে ঝুলে পড়েছে গাছের লতা। বাজারের তুলনায় গাছটিতে থাকা আঙ্গুরের সাইজ কিছুটা ছোট। স্বাদেও রয়েছে কিছুটা ভিন্নতা।

বাড়িতে আঙ্গুরের গাছ দেখতে এবং আঙ্গুর খেতে এসেছিলেন কয়েকজন তাদের একজন আকাশ রহমান। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় আঙ্গুরের এমন ফলন দেখে আমি অবাক। বাজার থেকে যে আঙ্গুর কিনে খাই, সেই তুলনায় এই আঙ্গুরের স্বাদ টক আছে,  অন্য কয়েকটি আঙ্গুরের গাছে আঙ্গুর মিষ্টি রয়েছে। তবে যে পরিমান আঙ্গুর ধরেছে। শুধু দেখতেই ইচ্ছে করছে।

আঙ্গুর চাষী জুয়েল রানা ও  শিপন বলেন, ‘আশা করি এ বছর ভালো ফল পাব। সাধারণত ৮০ থেকে ৮৫ দিনে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। এখন যে ফল দেখছেন, তা আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে খাওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় হলো, এ চাষ যখন শুরু করি; তখন আশপাশের মানুষ উপহাস করতে থাকে। অনেকে পাগলও বলতেন।এখন আমার আনন্দ ধরে না। প্রতিদিন আঙুর দেখার জন্য অনেকের সাক্ষাৎ মিলছে। আশা করি, এ বছর অনেক লাভবান হতে পারব। কোনো মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি। এখন স্থানীয় কৃষি অফিসসহ সব সময় মানুষ পাশে থাকছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে এখন আর তেমন বেশি খরচ নেই।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুবাস চন্দ্র রায় বলেন, ‘গত বছর তিনি ৫ টি চারা দিয়ে আঙুর চাষ শুরু করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাকে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে। আশা করি, তার হাত ধরেই এই অঞ্চলে আঙুরের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হবে।’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email