ব্রাজিলকে রীতিমতো নাচিয়ে আর্জেন্টিনার ৪-১ ব্যবধানের জয়।

ব্রাজিলকে রীতিমতো নাচিয়েছে আর্জেন্টিনার এ দল। তুলে নিয়েছে ৪-১ ব্যবধানের জয়।

সুখবরটা ম্যাচ শুরুর আগেই পেয়েছিল আর্জেন্টিনা।উরুগুয়ের বিপক্ষে বলিভিয়া ড্র করায় কনমেবল অঞ্চল থেকে সবার আগে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত হয়ে যায় লিওনেল স্কালোনির দলের। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের সে আনন্দ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়েছে আর্জেন্টিনা। ঘরের মাঠ মনুমেন্তালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে চিরপ্রতিন্দ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছে আলবিসেলেস্তেরা।

স্কোরলাইনই বোঝাচ্ছে, ব্রাজিলের ওপর কতটা দাপট দেখিয়েছে আর্জেন্টিনা। ঘরের মাঠ ভর্তি দর্শকদের সামনে ব্রাজিলকে স্রেফ নাচিয়ে ছেড়েছে স্কালোনির দল। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ম্যাচে ৪ গোল হজম করল ব্রাজিল। প্রথমার্ধে হুলিয়ান আলভারেস- এনসো ফের্নান্দেস ও ম্যাকঅ্যালিস্টারের গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টিনার হয়ে স্কোরশিটে নাম লেখান বদলি নামা ইউলিয়ানো সিমেওনে। আর ব্রাজিলের হয়ে সান্ত্বনাসূচক একমাত্র গোলটি করেছেন মাথেউস কুনিয়া।

ম্যাচের আগে ব্রাজিলের দিক থেকে বড় বড় কথাগুলো ফাঁকা বুলিই থেকে গেল, উল্টো ব্রাজিল গোল খেল এক হালি। উইঙ্গার রাফিনিয়া তো হুঙ্কারই দিয়েছিলেন, আর্জেন্টিনাকে ধসিয়ে দেবেন। সেই আর্জেন্টিনাই নাচিয়ে ছেড়েছে ব্রাজিলকে।
বল পায়ে শুরু থেকেই দাপট দেখানো আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই। মধ্যমাঠ থেকে আক্রমণভাগের বাঁপ্রান্তের দিকে লম্বা করে বল বাড়ালেন রদ্রিগো দে পল। তাগলিয়াফিকোর হেড ঘুরে সেটা যায় আলমাদার সামনে। তরুণ এ তারকা থ্রু বাড়ান বক্সের ভেতর হুলিয়ান আলভারেসের দিকে। ব্রাজিলের ডি বক্সে দুই ডিফেন্ডারের জটলা ভেদ করে এগিয়ে আসা ব্রাজিল গোলকিপার বেন্তোকে পরাস্ত করে জালে বল জড়ান আলভারেস।

শুরুতেই গোল পাওয়া আর্জেন্টিনা আরও বেশি চেপে বসে ব্রাজিলের ওপর। তাতে প্রথম গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় গোলের দেখাও পেয়ে যায় আলবিসেলেস্তেরা। ম্যাচের ১২তম মিনিটে হওয়া এ গোলের পাশে এনসো ফের্নান্দেসের নাম থাকলেও গোলটা যেন আর্জেন্টিনার দলীয় আক্রমণের প্রতিচ্ছবি। দে পল-ম্যাকআলিস্টার-আলভারেস-আলমাদাদের পা ঘুরে বল যায় ডানপ্রান্তে মলিনার কাছে। সেখান থেকে দূরের পোস্টে ক্রস করেছিলেন মলিনা। সেটি ব্রাজিল ডিফেন্ডার ওয়েসলির পায়ে লেগে হালকা দিক বদলে যায় ফের্নান্দেসের সামনে। আর তাতে দারুণ ফিনিশিং দেন চেলসিতে খেলা এ মিডফিল্ডার। আর্জেন্টিনার এ গোলটা টানা ১৫ পাসের ফসল।
দুই গোল দেওয়ার পরও একই গতিতে খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। তবে ম্যাচের ২৬ মিনিটে বড় ভুল করে বসেন ডিফেন্ডার ক্রিস্তিয়ান রোমেরো। নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করার সময় বল পেয়ে কাকে দেবেন, তা ভাবতে বেশি সময় নিয়ে ফেলেন রোমেরো। এ সুযোগে দারুণ ক্ষিপ্রতায় বল কেড়ে নিয়ে বক্সের অনেকটা বাইরে থেকেই শট নেন কুনিয়া। এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে পরাস্ত করে তা চলে যায় সরাসরি আর্জেন্টিনার জালে। ২-১! ম্যাচ জমে ওঠার ইঙ্গিত!
কিন্তু কোথায় কী! গোলের পর ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করতে থাকে ব্রাজিল। তবে দ্রুতই আবার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা। তার সুবাদে পেয়ে যায় তৃতীয় গোলের দেখাও। ৩৭তম মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠা আর্জেন্টিনার আক্রমণের শেষ পর্যায়ে প্রায় ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া আলমাদার শট কোনোমতে পোস্টের ওপর দিয়ে  পার করের দেন বেন্তো। কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। কর্নারে নিজেদের মধ্যে দেওয়া-নেওয়া করে সুযোগ বুঝে দূর থেকে বক্সের ভেতর থ্রু বাড়ান এনসো ফের্নান্দেস। দারুণ ক্ষিপ্রতায় বক্সে ঢুকে বল মাটিতে পড়ার আগেই পা লাগিয়ে বলের দিক বদলে বেন্তোকে পরাস্ত করেন ম্যাক আলিস্টার। ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
এ গোলের পর মধ্যমাঠে দুই দলের খেলোয়াড়রা খানিক তর্কেও জড়িয়ে পড়ে। সে যাত্রায় রাফিনিয়া ও তাগলিয়াফিকোকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন রেফারি। তবে প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার পর ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতে থাকে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে প্রায় গোলের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৪৯ মিনিটে এমি মার্তিনেসের লম্বা করে বাড়ানো বল ব্রাজিল বক্সের সামনে পেয়ে চিপ করেছিলেন আলভারেস। তবে সেটি দারুণ দক্ষতায় পোস্টের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন ব্রাজিল গোলকিপার।

মাঝে আলভারেসের আরও একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এছাড়া ৬১ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে এনসো ফের্নান্দেসের ক্রসে তাগলিয়াফিকোর হেড অল্পের জন্য পোস্টের ওপর দিয়ে যায়।

এর ২ মিনিট পর বক্সের সামনে এনদ্রিককে ফাউল করেন ওতামেন্দি। বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি-কিক পায় ব্রাজিল। তবে রাফিনিয়ার ফ্রি কিক আর্জেন্টিনার বিপদের কারণ হয়নি। ৬৫ মিনিটে বক্সের বাঁপ্রান্ত দিয়ে ঢুকে শট নিয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস। কিন্তু সেটাও এমি মার্তিনেসকে বড় পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি।

অন্যদিকে ৭১ মিনিটে দারুণে এক আক্রমণে ব্যবধান আরও বাড়ায় আর্জেন্টিনা। প্রায় মধ্যমাঠ থেকে বাঁপ্রান্তের দিকে তাগলিয়াফিকোর উদ্দেশ্যে বল বাড়ান দে পল। সে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে ক্রস করেন তাগলিয়াফিকো। অনেকটা দৌড়ে এসে তাতে ফিনিশিং দেন মিনিটখানেক আগেই বদলি নামা সিমেওনে। দুর্দান্ত এক কোনাকুনি শটে স্কোরলাইন ৪-১ করেন আতলেতিকো মাদ্রিদ তারকা।

১০ মিনিট পর আবারও গোলের খুব কাছে চলে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে বাঁকানো শট নিয়েছিলেন লিয়ান্দ্রো পারেদেস। তবে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডারের শট ঠেকিয়ে দেন বেন্তো। ম্যাচের যোগ করা সময়ে দে পলের দূর পাল্লার শট অল্পের জন্য পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আর গোল না হওয়ায় ৪-১ গোলের জয়েই মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।

এ জয়ে ১৪ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে কনমেবল অঞ্চলের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানটা আরও পাকাপোক্ত করল আর্জেন্টিনা। সমান ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চতুর্থ স্থানে সেলেসাওরা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email