সিয়াম-সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান।এমাসে বহিঃবিশ্ব গুলোতে খাদ্য পণ্যের দাম এবং মান ঠিক রেখে খাবার পরিবেশন করা হলেও বাংলাদেশের বেলায় তা ব্যতিক্রম।রমজানে বাঙালি জাতির খাবার তালিকা থাকে ছোলা-বুট,সহ বিভিন্ন রকমের ভাজাপোড়া নাশতা এবং হরেক রকমের ফলমূল।
আর এই লোভনীয় খাবার গুলো খেতে গিয়ে ভোক্তাদের পড়তে হয় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতেও পবিত্র মাহে রমজানকে উপলক্ষ্য করে শুরু হচ্ছে ভাজাপোড়া ও ফাস্টফুড খাবারের রমরমা ব্যবসা।এসব খাবার তৈরি করতে গিয়ে মানা হচ্ছে না ভোক্তাধিকার আইন।যাঁর কারণে এসব খাবার গ্রহণ করে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ।
পবিত্র রমজানকে ঘিরে সারাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে প্রশাসন। কিন্তু তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায়।রমজানের আগে থেকেই বাজার ব্যবস্থা ইচ্ছেমতো প্রযোজন ও পরিচালনা করছে ব্যবসায়ীরা।এক প্রকার সিন্ডিকেটে জিম্মি ভোক্তা সাধারণ। এদিকে রমজান মাস শুরু হয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখা যায়নি কোন প্রকার বাজার মনিটরিং বা নজরদারি।উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজার ফকিন্নিরহাট, কলেজ বাজার,পুরাতন ব্রিজঘাট বাজার এলাকায় মূল্য তালিকা বিহীন চলছে সিন্ডিকেট বাণিজ্য। স্থানীয়দের দাবি পবিত্র রমজান মাসে নিম্ন,নিম্ন মধ্যবিত্ত জনসাধারণের বিষয় বিবেচনা করে প্রতিটি বাজারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করে সিন্ডিকেট ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে প্রতিটি দোকানে ন্যায্য মূল্যে পণ্যের তালিকা সহকারে ব্যবসা পরিচালনা করতে বাধ্য করলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
অপরদিকে কর্ণফুলীতে আইসক্রিম,বেকারি, হোটেল এবং মিষ্টি সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী ছোট্ট-বড় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আছে।যেগুলো একটা সময় নিয়মিত মনিটরিং, অভিযান ও সংস্কার করা হতো।।এবং আইন অনুযায়ী প্রতিদিন তাদেরকে বাজার ও কল কারখানা মনিটরিং করে ও স্বাস্থ শিক্ষা প্রধান করে প্রতিদিন ডিজি অফিসে রিপোর্ট প্রধান করতে হয়।এবং মাসের শেষে তাদের অভিযানের রিপোর্ট প্রধান করতে হয়।কিন্তু গত বছরের ১৫ডিসেম্বর সাবেক উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মনোয়ারা বেগম কে বদলি করে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসে সংযুক্ত করে চন্দনাইশ উপজেলার স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মাজেদা বেগমকে গত ১৮ডিসেম্বর থেকে তাঁর কর্মস্থলে অতিরিক্ত হিসেবে সংযুক্তি দেখানো হলেও গত দুইমাসে কোনো বাজার মনিটরিং বা অভিযানের কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি।বাজার মনিটরিং বিষয়ে জানার জন্য উক্ত কমকর্তার মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি কোনো সাড়াশব্দ।
এদিকে দীর্ঘ সময় নিরাপদ খাদ্যের উপর কোনো ধরনের মনিটরিং বা অভিযান না হওয়ার সুযোগে ফায়দা লুটে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।তাঁরা প্রতিনিয়ত ভেজাল খাদ্য উৎপাদন করে সয়লাভ করে যাচ্ছেন,এ যেন দেখার কেউ নেই।পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনে মানা হচ্ছে না নিরাপদ খাদ্য আইন,পরিবেশ সংরক্ষণ আইন,ভোক্তাধিকার আইন এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন।এ নিয়ে বিপাকে পড়ছেন এ উপজেলার ভোক্তা সাধারণ।নিরাপদ খাদ্য নিয়ে উঠছে প্রশ্নও।অথচ খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য আইনে বলা হয়েছে নিরাপদ ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার মানুষের মৌলিক অধিকার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার গত বছরের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানুষের তৈরি দুর্যোগ ও প্রাকৃতিক কারণে সারা বিশ্বে মানুষ খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির অভাবে ভুগছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গেও খাদ্যনিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট। কেমিক্যাল ঝুঁকি, জৈবিক ও শারারিক মাধ্যমে খাদ্য দূষণ হতে পারে। এ অনিরাপদ খাবার খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। সারা বিশ্বে ৬০ কোটি মানুষ অনিরাপদ খাদ্য দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। আইসিডিডিআরবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে ক্যানসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিটি মানুষেরই নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
আইন অনুযায়ী জনগণের নিরাপদ খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে হবেই। এ জন্য ২০১৫ সালে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তৈরি হয়। উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ প্রতিটি ক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা এবং পাশাপাশি পোলট্রি, পশুপালন, মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। কৃষকেরা সকালে কীটনাশক ব্যবহার করে বিকেলে ফসল তোলেন। এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।
এদিকে আজ বাজার মনিটরিং কালে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্র্যেট কে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয় না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে অবশ্যয় অভিযান করবো।