রাজবাড়ীতে মীর মশাররফ হোসেনের ১১৪ তম মৃ*ত্যুবার্ষিকী পালিত

 

বাংলা সাহিত্যের অমর দিকপাল ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও গদ্যশিল্পী ‘বিষাদ-সিন্ধু’র’ রচয়িতা সাহিত্য সম্রাট মীর মশাররফ হোসেনের ১১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রে এই সাহিত্যিকের ১১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়।

বাংলা ভাষার অন্যতম এই প্রধান গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রি কলেজ, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মীরের সমাধিস্থল বালিযাকান্দির নবাবপুরের পদমদীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।

কর্মসূচির মধ্যে ছিলো মীর মশাররফ হোসেনের সমাধীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মোস্তাফিজুর রহমান। এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, কালজয়ী ঔপন্যাসিক সাহিত্য সম্রাট মীর মশাররফ হোসেনের ১১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হলো। মহান এই মনীষীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। বেলা ১১ টার সময় মীরের সমাধিস্থল পদমদীতে শায়িত মীর মশাররফ হোসেনের সমাধীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা প্রশাসন, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদ রাজবাড়ী, মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রী কলেজ সোনাপুর, আদর্শ লাইব্রেরী ও ক্লাব বালিয়াকান্দি ও মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদ বালিয়াকান্দি। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনগুলোর পক্ষে কথা বলেন, রাজবাড়ী মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদ এর আব্দুস সালাম তাসির, রাজ্জাকুল আলম, মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ কামাল হোসেন খান, সহযোগী অধ্যাপক শাহ্ জাজাল, আল বাসেত খোকন, বালিয়াকান্দি আদর্শ লাইব্রেরী ও ক্লাবের চৌধুরী রফিকুন্নবী টিটো, উত্তম কুমার দাস, মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান, কুদরত রহমান মহব্বত, বালিয়াকান্দি উপজেলা মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদের মুন্সী আমীর আলী, মোঃ সাইফুল ইসলাম সুমন, শ্রী নারায়ণ দেবনাথ, মোঃ আশরাফ মিয়া ও মোঃ নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তাগণ বলেন, বাংলা মুসলিম সমাজের দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীর জড়তা দূর করে আধুনিক ধারায় এবং রীতিতে সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত ঘটে মীর মশাররফ হোসেনের শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে। তার লেখা উপন্যাস রত্নবতী (উপন্যাস) ১৮৭৩, বসন্তকুমারী (নাটক) ১৮৭৩, জমিদার দর্পণ (নাটক) ১৮৬৯, গড়াই ব্রীজ বা গৌড়ী সেতু (কবিতাগ্রন্থ) ১৮৭৩, এর উপায় কি (প্রহসন) ১৮৭৬, বিসাদসিন্ধু ঐতিহাসিক (উপন্যাস) ১৮৮৫-৯১, সঙ্গীতলহরী ১৮৮৭, গো-জীবন (প্রবন্ধ) ১৮৮৯, উদাসীন পথিকের মনের কথা (জীবনী) ১৮৯৯, গাজী মিয়ার বস্তানী (রম্যরচনা) ১৮৯৯, মৌলদ শরীফ পদ্যে পদ্যে লিখিত (ধর্মীয় গ্রন্থ) ১৯০০, মুসলমানের বাঙ্গালা শিক্ষা ছাত্রপাঠ্য (প্রথম ভাগ) ১৯০৩ এবং (দ্বিতীয় ভাগ) ১৯০৮, বিবি খোদেজার বিবাহ (কাব্য) ১৯০৫, হযরত ওমরের ধর্মজীবন লাভ (কাব্য) ১৯০৫, হযরত বেলালের জীবনী প্রবন্ধ) ১৯০৫, হযরত আমীর হামজার ধর্মজীবন লাভ (কাব্য) ১৯০৫, মদিনার গৌরব (কাব্য) ১৯০৫, মদিনার গৌরব (কাব্য) ১৯০৬, মোশ্লেম বীরত্ব (কাব্য) ১৯০৭, এসলামের জয় (প্রবন্ধগ্রন্থ) ১৯০৮, আমার জীবনী (আত্মজীবনী) ১৯০৮-১০, বাজীমাত (কাব্য) ১৯০৮, হযরত ইউসোফ (প্রবন্ধ গ্রন্থ) ১৯০৮, খোতবা বা ঈদুল ফিতর (কাব্য) ১৯০৮ ও বিবি কুলসুম (জীবনী) ১৯১০। উদাসী পথিকের মনের কথা’ (১৮৯০), ‘গাজী মিয়ার বস্তানি’ অন্যতম।

১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর গৌরী নদীর তীরে লাহিনীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের এই পথিকৃৎ। তার বাবার নাম সৈয়দ মীর মুয়াজ্জম হোসেন ও মায়ের নাম দৌলতন নেছা। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মহান এই মনীষী মৃত্যুবরণ করলে। তাকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে সমাহিত করা হয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email