রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বিকাশ ব্যবসায়ী আলমগীর কবির হত্যার প্রধান আসামী হেলাল মোল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত হেলাল গোয়ালন্দ উপজেলার কাশিমা এলাকার মৃত মুন্তাজ মোল্লার ছেলে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজবাড়ী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
রাজবাড়ী জেলা পুলিশ শনিবার রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, গত ৪ ডিসেম্বর পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শরীফ আল রাজীব এবং গোয়ালন্দঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) উত্তম কুমার ঘোষ, এসআই আমিনুল হক, এসআই সিহাব আহমেদ সঙ্গীয় ফোর্স সহ লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ থানা ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানার কুন্ডের বাজারের সজিবের ঢালাই কারখানা থেকে গত ৬ ডিসেম্বর রাত পৌনে ৩ টার সময় আসামী হেলাল মোল্লা (৪৯) কে গ্রেপ্তার করেন।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামী হেলাল মোল্লার আপন ছোট ভাই হারুন মোল্লা (৪০) এর শ্বশুর বাড়ি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানা এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতো।
ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার ধুতরাহাটি গ্রামের মৃত আবুল কালাম মোল্লার ছেলে আলমগীর কবির (৪৮) এর রসুলপুর বাজারে বিকাশের দোকান ছিল। সেই সুবাদে তার সাথে আসামী হারুন মোল্লার পরিচয় হয়। গত ৩০ আগস্ট বেলা ১১ টার সময় আসামী হারুন মোল্লা ও আলমগীর কবির নিজ বাড়ী থেকে পাসপোর্ট করার জন্য ফরিদপুর শহরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। পরে একই দিন বেলা ১ টার সময় তার পরিবারের লোকজন আলমগীর কবিরের মোবাইল বন্ধ পায়। গ্রেপ্তারকৃত আসামী হেলাল মোল্লা গত ৩০ আগস্ট বিকাল ৪ টার সময় তার নিজ বাড়ীতে ঘুমিয়ে থাকে। তার ভাই আসামী হারুন মোল্লা তাকে ঘুম থেকে উঠাইয়া বাড়ির সামনে রাস্তার উপর নিয়ে আসে। তখন অজ্ঞাত অটোর মধ্যে পিছনের সিটে আলমগীর কবির অজ্ঞান অবস্থায় বসা ছিল। তখন হারুন, হেলাল মোল্লাকে বলে ভাই ওকে ধর ঘরে নিয়ে যাই, সে অসুস্থ্। তখন হেলাল মোল্লা ও হারুন মোল্লা মিলে আলমগীর কবিরকে ধরাধরি করে হেলাল মোল্লার ঘরে নিয়ে চৌকির উপর শোয়ায়। একপর্যায়ে হেলাল হারুনকে জিজ্ঞাসা করে কে উনি। হারুন জানায় যে, আলমগীর, বাড়ি নগরকান্দায়, ওকে মেরে ফেলতে হবে, না মারলে আমাকে মেরে ফেলবে। সেই মোতাবেক হেলাল ও হারুন একটি ভ্যান ভাড়া করে নিয়ে আসে।
পরে ঘর থেকে আলমগীর কবিরকে ধরে ভ্যানে উঠায়, তখন সন্ধ্যা ৭ টা বাজে। আসামী হারুন মোল্লা তার ভাই হেলালের ঘর থেকে বটি ও একটি ওড়না নিয়ে আসে। হেলাল ভ্যান চালিয়ে আলমগীরকে হত্যা করার জন্য তাকে নিয়ে জমিদার ব্রীজ,বেড়িবাধ ও বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২ ঘন্টা ঘোরাঘুরি করে। কোথাও সুযোগ না পেয়ে বিএনপি বটতলা থেকে পেয়ার আলী মোড়ে যাওয়ার রাস্তায় কাদেরের কলাবাগানের কাছে নিয়ে যায়।প্রথমে হারুন ও হেলাল ধরাধরি করে ভ্যান থেকে নামিয়ে রাস্তার ঢালে শোয়ায়। হারুন ওড়না দিয়ে দুই পা বেধে বুকের উপর চাপ দিয়ে ধরে। তাদের সাথে থাকা বটি দিয়ে আসামী হেলাল মোল্লা বাম হাতে বটি নিয়ে ডান হাত দিয়ে থুতনিতে ধরে আলমগীর কবিরের গলায় অনেকবার পোচ দেয়। তখন আলমগীর কবিরের গলা কেটে রক্ত বের হয়। আসামী হেলাল মোল্লা গলায় বটি দিয়ে পোচ দেয়ার সময় হেলাল মোল্লার ডান হাতের মধ্যমা ও তর্জনী দুটি আঙ্গুল হালকা কেটে যায়। আসামী হেলাল মোল্লা বটি রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। পরে আসামী হেলাল মোল্লা ও হারুন মোল্লা ভ্যানটি নিয়ে আমজাদ চেয়ারম্যানের পুকুরের কাছে গিয়ে হেলাল মোল্লা গোসল করে এবং হারুন মোল্লা হাত,মুখ ধৌত করে। পরে আসামী হারুন মোল্লা রাজবাড়ীর দিকে চলে যায় ও হেলাল মোল্লা ভ্যানটি উম্বারের নিকট বুঝিয়ে দিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যায়। তখন রাত প্রায় ১১ টা বাজে। পরে আসামী হেলাল মোল্লা ঢাকা চলে যায়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি ও ওড়না উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গোয়ালন্দ ঘাট থানায় গত ৩১ আগস্ট হত্যা মামলা দায়ের হয়।
আসামীকে গ্রেপ্তার করে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে আদালতে সোপর্দ করে। সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব বলেন, মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং পলাতক অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।