রাজবাড়ীতে বিএডিসির সোয়া ১ কোটি টাকার পেঁয়াজের বীজে কৃষকের স্ব’প্নভ’ঙ্গ

রাজবাড়ীতে বিএডিসির কাছ থেকে ১ কোটি ৮ লাখ টাকার পেঁয়াজ বীজ কিনে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ। আর এ বীজ বপন করে কৃষকের সারা বছরের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাড়াতে হিমসীম খাচ্ছে কৃষকরা। কৃষি বিভাগ ক্ষতি নিরুপনে সরেজমিন মাঠ পরিদর্শন শুরু করেছে।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজবাড়ী জেলা পেঁয়াজ উৎপাদনে সারাদেশের মধ্যে তৃতীয় জেলা। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এ জেলার ৫ উপজেলায় রবি প্রণোদনা হিসাবে ৪ হাজার কৃষকের মাঝে পেঁয়াজের বীজ বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বিএডিসির সরবরাহকৃত পেঁয়াজ বীজ কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে রাজবাড়ী জেলা সদরে ৮০০জন, পাংশায় ১০০০জন, কালুখালীতে ৮০০জন, বালিয়াকান্দিতে ১০০০জন ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪০০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়।

বিএডিসিকে বীজ বাবদ ১ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে কৃষি বিভাগ। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলার ৪ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে পেঁয়াজের বীজ বিতরণ করা হয়। জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও নষ্ট বীজের কারণে এ বছর ৭ থেকে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানিয়েছেন, কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে বিতরণ করা পেঁয়াজ বীজের অঙ্কুরোদগম হয়নি।  নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বালিয়াকান্দি কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে পেঁয়াজের বীজ সরবরাহ করা হয়। সাধারণত রোপণের এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের বীজের অঙ্কুরোদগম হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর ২০ দিন অতিবাহিত হলেও বীজের অঙ্কুরোদগম হয়নি। যারা সরকারি বীজ পেয়েছেন সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১ কেজি বীজ থেকে ভালো চারা জন্ম নিলে ৫০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা যায়। এখন বীজের সংকটের কারণে অনেক জমিতে আর পেঁয়াজ রোপন করা সম্ভব হচ্ছে না।

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিএডিসি থেকে সরবরাহকৃত পেঁয়াজের বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। বেশির ভাগ কৃষকদের বীজ অঙ্কুরোদগম হয়নি। ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করছি।
কয়েকজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, পেঁয়াজের বীজ অঙ্কুরোদগম হয়নি। এতে কৃষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে আমাদের উপর হামলার ভয়ে থাকতে হচ্ছে। মাঠে গেলেই ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা তেড়ে আসছেন।

রাজবাড়ী জেলা বীজ বিপণন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নৃপেন কুমার নন্দী বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম হয়নি স্বীকার করে বলেন, আমরা পরীক্ষা করেই কৃষকদের মধ্যে বীজ বিতরণ করেছিলাম। এটা সঠিক। কত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেই সংখ্যাটা বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোঃ হোসেন শহীদ সরোওয়ার্দী এ প্রসঙ্গে বলেন,  চলতি মৌসুমে জেলার ৪ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিএডিসি থেকে সরবরাহকৃত পেঁয়াজের বীজ বিতরণ করা হয়। বীজের অঙ্কুরোদগম হয়নি। পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র পূরণে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা করেন এ কৃষি কর্মকর্তা। ক্ষতিগ্রস্থদের একটি তালিকা করা হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email