রাজবাড়ীতে ফুল কপি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন প্রন্তিক কৃষক শামীম আহম্মেদ মন্ডল। তিনি একই গ্রামের মোঃ ছমির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে।
তার দেখাদেখি গ্রামের অনেকেই ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রায় ১ একর জমি দিয়ে চাষ শুরু করে বর্তমানে ৩ একরের অধিক জমিতে ফুলকপি তিনি অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সময় লাগেনি শামীমের।সফল চাষি শামীম আহমেদ মন্ডলের বাড়ী রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে। কথা হয় শামীম আহমেদ মন্ডলের সঙ্গে- তিনি বলেন, আমি পেশায় একজন কৃষক।
গত ৩ বছর ধরে ফুলকপি চাষ করছি। বাজার ও ফলন ভালো হওয়ায় ফুলকপি চাষ আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ২০২১ সালে মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে আমি ফুলকপি চাষ শুরু করি। প্রথম বছরে অল্প চারা রোপণ করেই ভালো লাভবান হই। পরের বছরে এক একর জমিতে ফুলকপি চাষ করি। এতেও লাভের মুখ দেখি। এরপর থেকে আমি অল্প অল্প করে জমি বাড়িয়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে প্রায় ৩ একর জমিতে প্রায় ৪০ হাজার ফুলকপির চারা রোপণ করি। প্রতিদিন জমিতে এসে নিজেই পরিচর্যা করি। যখন নিজে না পারি তখন দিনমজুরীতে শ্রমিক সঙ্গে রাখি। তিনি জানান, চারা রোপণের ২ থেকে আড়াই মাসের মধ্যে ফুলকপি বিক্রির উপযোগী হয়ে যায়। বিক্রি করার সময় প্রতি কেজির দাম পাচ্ছি ৬০-৭০ টাকা। বিক্রি করা শেষ পর্যন্ত আমার প্রায় ৩ একর জমিতে খরচ হবে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর আমার বিক্রি হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা। তিনি আরও বলেন, আগামীতে পাশে থাকা আমার অন্য জমি গুলোতেও আরও বড় পরিসরে ফুলকপির চাষ করব বলে আশা করছি। আমি মনে করি নিজের বাড়তি সময় নষ্ট না করে সবারই সবজি চাষে এগিয়ে আসা উচিত।
শামীম বলেন, এমনিতে শীত মৌসুমে এই সবজির হাট-বাজারে ক্রেতার ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাইকারদের কাছ চাহিদার অনুযায়ী ফলন বেশি হওয়াতে শামীম মন্ডলসহ অনেক কৃষকের মুখে হাসির জোয়ার বইছে। বালিয়াকান্দি উপজেলার গোবিন্দপুর, নারায়ণপুর, শেকাড়া, খালকুলা এসব গ্রামের পর্যাপ্ত পরিমাণে হয়েছে শীতকালিন এই সবজির চাষ। গোবিন্দপুর গ্রামের প্রান্তিক চাষী শামীম আহমেদ মন্ডল এবার তার জমিতে ফুলকপি ও বাধাঁকপির চাষ করে খরচ খরচা বাদ দিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকার কাছাকাছি আয় করতে পারবেন বলে আশাবাদী । শুধু কৃষক শামীমই নয়, আশপাশের গ্রামের অর্ধ-শতাধিক কপি চাষী চলতি শীত মৌসুমে তাদের জমিতে ফুল ও বাঁধাকপি চাষ করে অনেকটাই লাভবান হতে পারবেন বলে শতভাগ আশাবাদী। চাষী শামীম জানান, ‘ভাই আল্লাহ্ এবছর আমার ভাগ্য খুলে দিয়েছে। প্রায় ৩ একরের মত জমিতে ৪০ হাজার টাকার ফুল ও বাঁধাকপির চারা কিনে আর ৪৫ হাজার টাকার সার কীটনাশক দিয়ে এই পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার উপর বিক্রি করছি।’ বাঁকি ফুলকপি ও বাঁধাকপি জমিতে রয়েছে। আস্তে আস্তে বিক্রি করছি। ক্ষেতে এসে পাইকাররা দাম দর করছে ভালো দাম উঠলেই একবারে বিক্রি করে দেব।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, এই অঞ্চলের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে ফুলকপির চাষ করে আসছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। তিনি আরও বলেন, কম খরচে অধিক লাভজনক সবজির দৃষ্টান্ত হচ্ছে ফুলকপি। শীতকালীন মৌসুমে এলাকাভেদে ফুলকপি ২ থেকে ৩ বার চাষ করা যায়। রাজবাড়ীর সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব কাছে হওয়ায় কৃষক সরাসরি ভোক্তার কাছে সতেজ সবজি পৌঁছাতে পারে। আন্তরিকতা নিয়ে চেষ্টা করলে কৃষিতে শামীম আহমেদ মন্ডলের মতো যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন।