পাহাড়ে হেমন্তের সকাল, মেঘে বিছানো চাদর

হিমেল বাতাস আর মৃদু কুয়াশা নিয়ে শরৎ ও শীতের মাঝে আসে হেমন্ত ঋতু। নিয়ে আসে শীতের আগমনী বার্তা। গ্রাম বাংলায় চলে নতুন ফসলের উৎসব। ঘরে ঘরে নতুন ধানের পিঠাপুলির ধুম পড়ে। কৃষকের মুখ আনন্দে ভরে থাকে। দুপুরের পর রোদের তীব্রতা কমে প্রকৃতি বুলায় শীতের পরশ। শীতল বাতাস। স্বল্পায়ুর বিকেলের পর সন্ধ্যা নামতেই শীত শীত মিষ্টি অনুভূতি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ হেমন্ত বন্দনায় লিখেছিলেন-
হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলোরে
হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে
ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো
জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে
শূন্য এখন ফুলের বাগান, দোয়েল কোকিল গাহে না গান,
কাশ ঝরে যায় নদীর তীরে।’
হেমন্তের সকাল- সন্ধ্যা নিয়ে কবিতা, গান, কাব্য লিখেছেন প্রায় সকল কবি।
শিশির ঝরা সকাল, স্নিগ্ধ বিকেল আর হিমায়িত সন্ধ্যার রুপ অতুলনীয়।

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্যে হেমন্তে পাহাড় দেখা দারুন উপভোগ্য। পর্যটন কেন্দ্র, রাস্তার ধারে সহ নানা স্থানে বসে ভ্রাম্যমাণ জুমের নতুন বিনি চালের তৈরী পিঠার দোকান। যা অনায়াসে যে কারোই মন কাড়ে। হেমন্তের স্নিগ্ধ পাহাড়ের রুপ ধরা দেয় সকাল ৬/৭ টার দিকে। যখন পূর্ব আকাশে সূর্য উকি দেয় তখন পুরো শহর ঢাকা থাকে কুয়াশার চাদরে। দেখে মনে হবে সাদা তুলার বিছানা। বিকেলে দূর হতে দূর, যতদূর চোখ যায় পরিস্কার সবুজ পাহাড় পর্যটকদের মনকে প্রফুল্ল করে তুলে।
অতিথি পাখির সাথে পাল্লা দিয়ে পাহাড় মুখরিত থাকে ময়না, টিয়া, শালিক, হলদে পাখির ডাকে। জুমচাষিরা ফলসে ঘর ভরে, গা ঝাড়া দিয়ে নতুন হয়ে উঠে গাছপালা, পাখির কলকাকলীতে প্রাণবন্ত হয় পাহাড়। প্রকৃতির এমন রুপ হেমন্তেই মিলে।
হেমন্তের বৈচিত্রতা, ফসল, আর প্রেমে প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন:

‘প্রথম ফসল গেছে ঘরে
হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে
শুধু শিশিরের জল;
অঘ্রানের নদীটির শ্বাসে
হিম হয়ে আসে
বাঁশপাতা-মরা ঘাস-আকাশের তারা!
বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা!
ধানক্ষেতে-মাঠে
জমিছে ধোঁয়াটে
ধারালো কুয়াশা!’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email