ডা.শাহাদাত চসিকের মেয়র, প্রজ্ঞাপন জারি

নির্বাচনের তিন বছর আট মাস পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র হলেন নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তাকে মেয়র ঘোষণা করে গত রাতে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চসিকের ষষ্ঠ পরিষদের নির্বাচন। এতে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডা. শাহাদাত। তিনি ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান।

এর আগে ২০২১ সালে নির্বাচনের পর ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছিল। তিন বছর ৬ মাস ৪ দিন দায়িত্ব পালন করেন। গতকাল জারি করা প্রজ্ঞাপনে ‘রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা’টিও বাতিল করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের ১ অক্টোবরের আদেশে চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে ‘নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারির গেজেটে উল্লেখ করা নির্বাচনের ফলাফলের ১ নম্বর কলামের ১ নম্বর ক্রমিকের বিপরীতে ২ নম্বর কলামে মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর পরিবর্তে ‘শাহাদাত হোসেন’ এবং ৩ নম্বর কলামে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের’ পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হলো। নির্বাচনী ট্রাইব্যু–নালের রায়ের পর আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি সাপেক্ষে শাহাদাতের এ গেজেট প্রজ্ঞাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব আতিয়ার রহমান।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শাহাদাত হোসেন ৯ জনকে বিবাদী করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯ ও নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৫৩ এর ২ উপধারা মোতাবেক তিনি মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও নির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিমসহ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া অপরাপর পাঁচ মেয়র প্রার্থীকে (মো. জান্নাতুল ইসলাম, এম এ মতিন, খোকন চৌধুরী, মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও আবুল মনজুর) বিবাদী করা হয়।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন পরবর্তী ফলাফল সংক্রান্ত প্রকাশিত গেজেট বেআইনি, অবৈধ ও ন্যায় নীতির পরিপন্থী। নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থী আচরণবিধি ২০১৬ এর ৩, ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২১ ও ২৭ ধারা পুরোপুরিভাবে লঙ্ঘন করেছেন। এছাড়া নির্বাচন থেকে যাবতীয় সুযোগ ও অধিকার পাওয়া সমীচীন থাকলেও তা পাননি বলে উল্লেখ করেন ডা. শাহাদাত হোসেন। এজাহারে বলা হয়, ২ থেকে ৪ নম্বর বিবাদী (চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার) নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির কোনো প্রকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। যেটি নির্বাচনী বিধিমালা পরিপন্থী।

এরপর গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন ডা. শাহাদাতরকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন। এছাড়া রেজাউল করিমের মেয়র নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেন। এছাড়া আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশ দেন। এরপ্রেক্ষিতে গত রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হল।

এর আগে ২০২১ সারের ১১ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন রেজাউল করিম চৌধুরী। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বগ্রহণ করেন ১৫ ফেব্রুয়ারি। সরকার পতনের পর ১৯ আগস্ট তাকে অপসারণ করা হয়। তার স্থলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক পদে নিয়োগ দেয়া হয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email