ফুলবাড়ীতে আফ্রিকান বিরল প্রজাতির কাইজেলিয়া গাছের  চারা উৎপন্ন

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার রমনী কান্ত রায় নামের এক কৃষক বিরল প্রজাতির  ১৫ টি কাইজেলিয়া গাছের চারা উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন।

ঔষধি গুণ সম্পন্ন এই গাছটির সাথে দেশের মানুষের পরিচয় রংপুর কারমাইকেল কলেজের মাধ্যমে। ঐতিহ্যবাহী এ কলেজের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে একটু এগুতেই থামতে হবে যে কাউকে। কেননা সেখানে একটি গাছের নিচে লেখা রয়েছে, দাঁড়াও পথিকবর- আমার নাম কাইজেলিয়া। আমি বিগনোনিয়াসিয়া গোত্রের। আমার বৈজ্ঞানিক নাম কাইজেলিয়া আফ্রিকানা। আমার বাস আফ্রিকায় হলেও এই কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে কতিপয় বৃক্ষ প্রেমিক আমাকে আনুমানিক ১৯২০ সালের দিকে এখানে রোপন করেছিলেন। কারমাইকেল কলেজ ছাড়া বাংলাদেশের কোথাও আমাকে দেখতে পাবেনা। আমার উচ্চতা ২০ থেকে ২৫ মিটার। ফুল হয় মেরুন অথবা কালচে লাল রং এর। ফল হয় লম্বাটে ও গোলাকার। একেকটি ফলের ওজন হয় ৫ থেকে ১০ কেজি। আমার ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের, পাকলে বাদামি। এই ফল বিষাক্ত তবে অত্যন্ত রোচক। এটি প্রক্রিয়াজাত করে আলসার, সিফিলিস,সর্পদংশনের ঔষধ, বাত, ছত্রাক দমন, চর্মরোগ মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী এমনকি ক্যানসার রোগের চিকিৎসাতেও বহুল ব্যবহৃত হয়। এশিয়াতে আমি এখন লুপ্ত প্রায়। যদি তোমরা সঠিক পরিচর্যা না কর তাহলে অচিরেই আমি নিঃশেষ হয়ে যাবো। আমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব তোমারদেরই। কাইজেলিয়ার টিকে থাকার এই আকুতি নাড়া দেয় এক কৃষককে।

ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের সেনের খামার গ্রামে ওই কৃষকের নার্সারিতে গিয়ে দেখা মিলেছে ১৫ টি কাইজেলিয়া চারা গাছের । বিরল প্রজাতির কাইজেলিয়ার চারা উৎপাদনের বিষয়ে রমণী কান্ত জানান, জীবন জীবিকার তাগিদে ১৯৮৮ সালে তিনি হরিপ্রিয়া নামে নার্সারি গড়ে তোলেন। নার্সারিতে বীজ ও চারার যোগান দিতে তাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে হয়। একটা সময় তিনি রংপুর কারমাইলের কাইজিলিয়া গাছ সম্বন্ধে জানতে পারেন।

জানার পর থেকেই কাইজেলিয়া গাছের চারা উৎপাদনের নেশা পেয়ে বসে তাকে। দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর গত বছরের শেষের দিকে রংপুর থেকে দুটি কাইজেলিয়া গাছের ফল সংগ্রহ করতে সক্ষম হন তিনি। এরপর নেমে পড়েন ফলের বীজ থেকে চারা উৎপন্নের কাজে। সনাতনী পদ্ধতিতে বীজ বপনের পর ১৫ টি চারা গজায়। নয় মাসে কোন কোনটি চারাগাছ লম্বায় ৫ ফিট হয়েছে। বেশিরভাগ চারাই বর্তমানে রোপনের উপযুক্ত হয়েছে।

চারাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চারাগুলো কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে। দামাদামি করে। কিন্তু তিনি তাদের কাছে চারা বিক্রি করবেন না বলে জানান। কারণ গাছের চারা গুলো ব্যক্তিগত ভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। বিরল প্রজাতির কাইজেলিয়া গাছের চারা গুলো সংরক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যোগ কামনা করেন তিনি।

শাহ বাজার এএইচ সিনিয়র ডিগ্রি মাদ্রাসার জীব বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ফুলবাড়ীতে রমনী কান্ত বিরল প্রজাতির কাইজেলিয়া গাছের চারা উৎপন্ন করতে পারায় তিনি আনন্দিত। ঔষধিগুণ সম্পন্ন কাইজেলিয়া গাছের চারা গুলো সংরক্ষণের জন্য বৃক্ষপ্রেমি সহ সরকারি ভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা বন কর্মকর্তা নবীর উদ্দিন জানান, বিরল প্রজাতির কাইজেলিয়া গাছের চারা গুলো সরকারি ভাবে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন জানান, গত কয়েকদিন আগে উপজেলা পরিষদ চত্বরে কৃষি মেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে কাইজেলিয়া গাছের চারা গুলো দেখে আমি অবাক হয়েছি। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে গাছের চারা গুলো সংরক্ষণ ও পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email