গোপনে দেশ ছেড়েছেন আ.লীগের যেসব নেতা

গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দলের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা না আসায় প্রথমে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যান তারা, কয়েক দিনের মধ্যেই দেশ ছাড়তে শুরু করেন সাবেক সরকারের আমলের নেতাকর্মীরা।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পেরিয়ে গেছে এক মাসেরও বেশি সময়। এখনো আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অবৈধভাবে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। যারা পালিয়ে গেছেন বা পালানোর চেষ্টায় আছেন, তাদের প্রায় সবাই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, সরকার পতনের এত দিন পরও কীভাবে এসব ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালাতে পারছেন।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরাও পড়েছেন কেউ কেউ। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ৫ আগস্টের কিছুদিন আগে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে আর দেশে ফেরেননি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের এমন ১৩ নেতা রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, গত সপ্তাহে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। আর ৫ আগস্টের ঠিক পরপরই দেশত্যাগ করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিম ও আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অনেকে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আরও বেশ কয়েকজন নেতার দেশ ছাড়ার গুঞ্জন রয়েছে। তবে তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ৩ আগস্ট রাতে পরিবারসহ দেশ ছাড়েন। তিনি ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর যান। তার পরিবার পৃথক ফ্লাইটে যায় লন্ডনে। তাপসের ভাই যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ সরকার পতনের কয়েক দিন আগে, ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তিনি দেশে আছেন বলে জানা গেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও আন্দোলনের সময় সপরিবার সিঙ্গাপুরে চলে যান।

এছাড়া এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আরও যেসব নেতার দেশত্যাগের খবর পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও কার্যনির্বাহী সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জি। এ ছাড়া সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার এবং ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীও দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।

এই তালিকায় আরও রয়েছেন- ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জয়দেব নন্দী।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email