চন্দনাইশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িত – জিম্মি  অভিভাবক শিক্ষার্থীরা

এম হেলাল উদ্দিন নিরব: চট্টগ্রামের চন্দনাইশে হাশিমপুর মনির আহমদ কামাল উদ্দিন আহমদ স্কুল এন্ড কলেজ ( এম. এ. কে. ইউ) এর এমপিও ভুক্ত ৪ জন  শিক্ষকের  মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে  চলছে কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষাকে পুঁজি করে নাম বিহীন কোচিং সেন্টারটি হাতিয়ে নিচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা।

এমপিওভুক্ত সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অসাধু  শিক্ষকদের কাছে রীতিমতো জিম্মি শিক্ষার্থী- অভিভাবকরা। মুখ খুলে বলতে পারেন না একাধিক শিক্ষার্থী।

বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজ বলছে, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে শিক্ষা যে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে তা ধ্বংস করছে এসব কোচিং সেন্টার। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এসব কোচিং সেন্টারে চলছেন পাঠদান। এসব কোচিংয়ের নেই কোন চন্দনাইশ উপজেলার  অনুমোদন। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের পর দিন চলছে অবৈধ এসব কোচিং বাণিজ্য। এমনকি মানা হচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নোটিশ।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, চন্দনাইশে হাশিমপুর মনির আহমদ কামাল উদ্দিন আহমদ স্কুল এন্ড কলেজের এমপিওভুক্ত কয়েকজন শিক্ষক মিলে কোচিং সেন্টারটি পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। কোচিং এ না পড়লে পরীক্ষায় নাম্বার কম দেওয়া সহ বিভিন্ন ভয়ে ক্লাসে পাঠদান না করে কোচিং মুখী এসব শিক্ষার্থী।

দৈনিক বায়েজিদ এর অনুসন্ধানে জানা যায়, চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের হাশিমপুর মনির আহমদ কামাল উদ্দিন আহমদ স্কুল এন্ড কলেজ পাশেই নাম বিহীন অবৈধ কোচিং সেন্টারে পাঠদান করে আসছেন এক শ্রেণির অসাধু শিক্ষক। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছেন। পরীক্ষা চলাকালে নির্দেশনা অনুযায়ী কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকার কথা থাকলেও নিয়ম মানছেন না কেউ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, নির্দিষ্ট শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট বা কোচিং না করলে পরীক্ষায় নম্বর কম অথবা ফেল করিয়ে দেওয়া হয়। বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাইভেট- কোচিং করতে বাধ্য করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে স্কুলের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি এস এম ইকবাল দৈনিক বায়েজিদ কে বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কোচিং সেন্টারের সাথে যুক্ত রয়েছেন এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা হচ্ছেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক অশোক কান্তি দে, বিপিএড ক্রীড়া শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন মুরাদ, ল্যাব সহকারী মিজানুর রহমান, লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ হোসেন সাগর প্রমুখ।

শুধুমাত্র কোচিং সেন্টারে নয়, চলছে বাসা-বাড়িতে কোচিংয়ের ক্লাস। এসব কোচিং বা প্রাইভেট সেন্টারে শিক্ষার্থী সংখ্যা নেহায়েত কম না হলেও বছর শেষে কতজন  ভালো কলেজে  ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন তার সঠিক হিসাব পাওয়া দুরূহ।
সচেতন অভিভাবকরা বলছেন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালের জারিকৃত নীতিমালা কিছুদিন হৈ-চৈ ফেলেছিল। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের বিশেষ নজরদারী না থাকায় সর্বত্র শিক্ষকের বাসায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা বাসা-ভবন ভাড়া নিয়ে কোচিং বাণিজ্য চালানো হচ্ছে প্রকাশ্যে। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঠিকমত লেখাপড়া করানো হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে সন্তানদের কোচিংয়ে পাঠাচ্ছেন। তাদের মতে, এজন্য মাসে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা শ্রেনীভেদে গুণতে হয়। এছাড়া কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষার্থীদের গাইড বই,নোট বই ও মডেল টেষ্ট কিনতে বাধ্য করছে। কিন্তু এসব কিছুর পরেও কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন হচ্ছে না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম জিন্নাহ বলেন, আমাদের আগে থেকে চিঠি দেওয়া আছে তারা কোচিং বাণিজ্যের সাথে থাকতে পারবেন না। এসময় তিনি এই প্রতিবেদক’কে আমি মোবাইলে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে অফিসে আসার আমন্ত্রণ জানান।

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার বিপিন চন্দ্র রায় বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কোচিং সেন্টারের সাথে যুক্ত থাকতে পারবেন কিনা নীতিমালাতে আছে কিনা আমার জানা নাই। তিনি আরো বলেন, কোচিং বাণিজ্য বলতে তারা ভাইভেট টাইভেট পড়ায়, আসলে আমার পুরোপুরি জানা নাই।
এবিষয় স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও অবৈধ কোচিং সেন্টারের পরিচালকঅশোক কান্তি দে সাথে কথা বলতে চাইলে ফোন কেটে দেন তিনি।

এদিকে অভিভাবকরা কোচিং বাণিজ্য বন্ধের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রাইভেট কিংবা কোচিং নয়-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই হোক শিক্ষা অর্জনের মূল কেন্দ্র। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোচিং বাণিজ্য বন্ধের উদ্যোগ মানছে না কোচিং সেন্টারগুলো। প্রধান সড়কের বাইরে ভবন ভাড়া নিয়ে কিংবা কেউ টের না পায় সেজন্য বাইরে থেকে তালা লাগানো থাকলেও ভেতরে কোচিংয়ের ক্লাস করানো হচ্ছে তথ্য উঠে আসে। কোচিংগুলোতে ঠিকই ক্লাস করানো হচ্ছে, শুধু কৌশল পাল্টানো হয়েছে।

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email