জন্মর্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী | আবদুল গাফফার চৌধুরী

বায়েজিদ ডেস্ক

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’ কালজয়ী এই গানের লেখক বর্ষীয়ান লেখক, গীতিকার, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।

আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম হাজী ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মরহুমা জহুরা খাতুন। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রথমে উলানিয়া জুনিয়র মাদরাসায় লেখাপড়া শুরু করেন। পরে হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন।

একজন সুপরিচিত বাংলাদেশি গ্রন্থকার, কলাম লেখক। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা। স্বাধীনতাযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন।

বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তার বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী। বোনরা হলেন মানিক বিবি, লাইলী খাতুন, সালেহা খাতুন, ফজিলা বেগম ও মাসুমা বেগম।

কট্টর আওয়ামী লীগপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৫০ সালে ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরের বছর দৈনিক সংবাদ প্রকাশ হলে গাফ্ফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। ১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের মাসিক সওগাত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। এ সময় তিনি ‘মাসিক নকীব’ও সম্পাদনা করেন। একই বছর তিনি আবদুল কাদির সম্পাদিত ‘দিলরুবা’ পত্রিকারও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন।

১৯৫৬ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ওই বছরই তিনি প্যারামাউন্ট প্রেসের সাহিত্য পত্রিকা ‘মেঘনা’র সম্পাদক হন। এরপর তিনি দৈনিক আজাদ-এ সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’র সম্পাদক হন। পরের বছর ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামেন এবং ‘অণুপম মুদ্রণ’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। দু’বছর পরই আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়।

১৯৬৬ সালে তিনি দৈনিক ‘আওয়াজ’ বের করেন। পত্রিকাটি ছয় দফা আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। ১৯৬৭ সালে আবার তিনি ‘দৈনিক আজাদ’-এ ফিরে যান সহকারী সম্পাদক হিসেবে। ১৯৬৯ সালে আবার ফিরে যান দৈনিক ইত্তেফাকে। ১৯৬৯ সালে তিনি অবজারভার গ্রæপের দৈনিক ‘পূর্বদেশ’-এ যোগ দেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা যান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা’য় লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি কলকাতায় ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ ও ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘দৈনিক জনপদ’ বের করেন।

১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান। এরপর তার প্রবাসজীবন শুরু হয়।

তখন থেকেই স্থায়ীভাবে তিনি সেখানে বসবাস শুরু করেন। সেখানে ১৯৭৬ সালে তিনি ‘বাংলার ডাক’ নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। আরও একাধিক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। প্রবাসে বসে গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের ঢাকা থেকে প্রকাশিত কয়েকটি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি গাফ্ফার চৌধুরী গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘স¤্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে আছে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভ‚ষিত হয়েছেন গাফফার চৌধুরী। ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।

বৃহস্পতিবার ১৯ মে ২০২২ সালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email