বোয়ালখালীতে সন্ত্রাসীদের ভয়ে কাজে যাচ্ছেন না শ্রমিকরা

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের ভয়ে কাজে যাচ্ছেন না পাহাড়ে কৃষি বাগানের শ্রমিকরা। একের পর এক শ্রমিক অপহরণের ঘটনায় আতংকে রয়েছেন উপজেলার জৈষ্ঠ্যপুরা, আমুচিয়া ও আহলা কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় সৃজিত গাছ বাগান, লেবু, মাল্টা, আম, লিচুসহ বিভিন্ন কৃষি বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহকারি শত শত শ্রমিকরা। সন্ত্রাসীরা কৃষকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণ পেলেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাগান মালিক-শ্রমিকরা।
এ ব্যাপারে গত ৫ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে লিখিত আবেদন করেছেন আহলা কড়লডেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হামিদুল হক মান্নান। তিনি বলেন, এলাকার খেটে খাওয়া মানুষগুলো পাহাড়ে দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালান। সন্ত্রাসীরা প্রায় সময় বাগান মালিক-শ্রমিকদের অপহরণ করে মারধর করছে এবং মুক্তিপণ নিচ্ছে। ভয়ে তাঁরা কাজে যেতে পারছেন না। এলাকার শত শত শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করেন এ পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন বাগানে কাজ করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক লেবু বাগান মালিক জানান, অপহরণ, মারধর ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় শ্রমিকরা কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কৃষি ও ফলদ বাগানে উৎপাদিত ফসল বাগানেই নষ্ট হচ্ছে। বাগানগুলো পরিচর্যার অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, মুখোশধারী সাত-আট জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লেবুবাগানের শ্রমিকদের হাত-পা বেঁধে মারধর করে। সঙ্গে থাকা মোবাইল, টাকা নিয়ে নেয়। পরে গহীন অরণ্যে নিয়ে গিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে বাড়িতে খবর পাঠানো হয় মুক্তিপণের জন্য। মুক্তিপণের টাকা দিলে ছাড়া পান তাঁরা। জানা গেছে, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল বোয়ালখালী-পটিয়ার পাহাড়ি সীমান্ত থেকে ৩২জন বাগান মালিক ও শ্রমিককে অপহরণ করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এরপর মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি মেলে তাদের। এরপর ২৬ মে করলডেঙ্গা ইউনিয়ন এলাকার ১৬জন শ্রমিককে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। তারাও মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।
১৬ নভেম্বর বোয়ালখালী-পটিয়া সীমান্ত থেকে অপহৃত হন পাহাড়ের বাগান কাজ করতে যাওয়া ৪ শ্রমিক। অপহরণকারীদের টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন তাদের পরিবার। এরপর দিন ১৭ নভেম্বর ১৬জন শ্রমিক জৈষ্ঠ্যপুরা পাহাড় থেকে অপহৃত হন। অপহরণকারী মারধরের পর টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে অন্তত তিনশতাধিক শ্রমিককে জিম্মি করে কয়েক লাখ টাকার মুক্তিপণ আদায় করেছে সন্ত্রাসীরা। জীবন জীবিকার পাহাড়ে এখন শুধু ভয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের আবেদনটি পেয়েছি। আবেদনে সুনির্দিষ্ট এলাকার তথ্য নেই। পাহাড়ি এলাকা তো বিশাল। ঠিক কোনো এলাকায় এ ঘটনা ঘটছে তা জানতে পারলে ভালো হতো। তারপরও থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email