বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ট্যুরিস্ট সিম

আল-আমীন দেওয়ান :

বিদেশে গিয়ে এয়ারপোর্টে নেমেই আমরা প্রথমে যে কাজগুলোর কথা ভাবি তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল যোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগ।

বিশ্বের অনেক দেশের এয়ারপোর্টেই বিদেশীদের জন্য ওই দেশের অপারেটরগুলো নানা অফার- প্যাকেজের ট্যুরিস্ট বা ট্রাভেল সিম দিয়ে থাকে। যা মেলে দেশগুলোর সবখানেই। প্রতিবেশী দেশ ভারত কিংবা মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে মোবাইল অপারেটরগুলোর ট্যুরিস্ট সিমের হরেক ব্র্র্যান্ডিং দেখা যায়। বিদেশীরা যার যার পছন্দ অনুযায়ী তাদের পাসপোর্টের বিপরীতে সেসব সিম কেনেন এবং এই সিম বেশ জনপ্রিয়ও।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ট্যুরিস্ট সিম বা ট্রাভেল সিম বলতে যা বোঝায় এমন কোনো সিম নেই। বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা বিদেশী কিংবা পর্যটকদের জন্য আলাদা ব্র্যান্ডিংও নেই। দেশে অপারেটরগুলো সাধারণ যেসব সিম বিক্রি করে থাকে প্রয়োজন হলে সেখান হতে বিদেশীরা তাদের পাসপোর্টের বিপরীতে সিম নেন।

তবে এবার বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই চালু হচ্ছে ট্যুরিস্ট সিম। ইতোমধ্যে বিটিআরসি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নীতি-নির্দেশনাও তৈরি করেছে।

ট্যুরিস্ট সিম কেনো প্রয়োজন হয় :

বেশিরভাগ বিদেশী নাগরিক ও পর্যটকরা সাধারণত অল্প সময়ের জন্য ভ্রমন করেন বা দেশে আসেন। এরপর তারা চলে গেলে তাদের পাসপোর্টের বিপরীতে নিবন্ধিত সিমটি অব্যবহৃত থেকে যায় এবং সেখান হতে কোনো রাজস্বও আসে না।

নিয়ম অনুযায়ী একবার নিবন্ধিত সিম অব্যবহৃত হওয়ার পর ৫৪০ দিনের আগে পুনরায় নতুন করে অন্য কারও নামে নিবন্ধন করা যায় না। ফলে মোবাইল স্টেশন ইন্টারন্যাশনাল সাবস্ক্রাইবার ডিরেক্টরি নাম্বার বা এমএসআইএসডিএন এর মতো সীমিত রিসোর্সের অপচয় হয়।

বাংলাদেশী নাগরিক ও বিদেশী নাগরিক বা আগত পর্যটকদের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন। সেখানে বিদেশীদের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়ে কোনা সেবা না থাকায় তারা বাংলাদেশী সিম কিনতে আগ্রহী হন না।

বিদেশীরা সিম নিয়ে স্বল্প সময় ব্যবহার করে তা রেখে ফিরে গেলে ওই সিম ভিসার মেয়াদ বা সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত সচল থাকে। এসময় সিমটি বেহাত হয়ে অসাধু চক্রের হাতে গেলে অপরাধ সম্ভাবনা থাকে।

বাংলাদেশে এসে সিম কেনেন কতোজন বিদেশী ?

গত এক বছরে বিদেশী পাসপোর্টের বিপরীতে মাত্র ৩১ হাজার ৩৫৪টি সিম নিবন্ধিত হয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ২০১৯ সালেই বাংলাদেশে ৩ লাখ বিদেশী নাগরিক এসেছেন। সে হিসেবে স্বাভাবিক সময়ে বছরে যে বিপুল সংখ্যক বিদেশী আসেন এবং তারা যে বাংলাদেশী সিম কিনতে আগ্রহী হন না তা ধারণা করা যায়।

যেসব শর্তে ট্যুরিস্ট সিম চালু হচ্ছে :

ট্যুরিস্ট সিম একটি নির্দিষ্ট নম্বর ব্লকের হবে। এই ব্লকের বাইরে অপরারেটররা ট্যুরিস্ট সিম বরাদ্দ দিতে পারবে না।

ট্যুরিস্ট সিম হবে ৭, ১৫ এবং ৩০ দিন মেয়াদে । আর নিবন্ধনকৃত ওই সিম ৩০ দিন পর অনিবন্ধিত হয়ে যাবে। ট্যুরিস্ট সিমের পরে যদি কোনো বিদেশীর দীর্ঘমেয়াদে সিম প্রয়োজন হয় তাহলে বিডার ওয়ার্ক পারমিটের বিপরেতে নিয়মিত নতুন সিম নিতে পারবেন। এখানে তার ব্যবহৃত ট্যুরিস্ট সিমের কোনো রূপান্তর করা যাবে না এবং দীর্ঘমেয়াদে ট্যুরিস্ট সিমের কোনো নম্বর নিতে পারবেন না।

অপারেটররা বিদেশী বা পর্যটকের চাহিদার প্রেক্ষিত্রে ভিন্ন অফার-প্যাকেজ দিতে পারবেন। তবে দেশে-বিদেশে ডেটা, ভয়েস, এসএমএস এবং কম্বো প্যাকেজ ছাড়া আর কোনও প্যাকেজ অফার করা যাবে না।

এই সিমের জন্য করা প্যাকেজ-অফারে বিটিআরসির পূর্বানুমতি লাগবে। আর প্যাকেজগুলো অপারেটরের নিয়মিত প্যাকেজের মধ্যে পড়বে না।

সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্লাটফর্মে এ সিম আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হবে।

একটি পাসপোর্টে সর্বোচ্চ দুটি সিম নিবন্ধন করা যাবে। থাকবে ই-সিম সুবিধাও।

এয়ারপোর্ট, ল্যান্ডপোর্ট বা নৌবন্দরসহ দেশের সব পোর্ট অব এট্রিতে বিটিআরসি অনুমোদিত অপারেটরগুলোর রিটেইলাররা এবং দেশের কাস্টমার কেয়ারগুলোতে ট্যুরিস্ট সিম নিবন্ধন করা যাবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email